যেকোন ধরণের ধর্মীয় প্রশ্নের উত্তর জানতে বামে মেজেজ্ঞার আইকনে ক্লিক করে আমাদের প্রশ্নটি লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে জানান, SanatanLive.blogspot.com

প্রতিমা বিসর্জনের তাৎপর্য

প্রথম কথা হল আমরা মূর্তি পূজা করি না। আমরা প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে প্রতিমা পূজা করি। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, 
“মূর্তিপূজা করে না হিন্দু কাঠ মাটি দিয়ে গড়া।
মৃন্ময় মাঝে চিন্ময় হেরে(দেখে) হয়ে যাই আত্মহারা।।”


(HINDUS don’t pray the idol, they pray the ideal.) 


সনাতন শাস্ত্র বিশ্বাস করে, এই বিশ্বের প্রতিটি জিনিস পঞ্চ মহতত্ত্বে তৈরি। পঞ্চ মহতত্ত্ব হল মাটি, জল, বায়ু, আকাশ, অগ্নি। “মানুষের দেহও পাঁচটি উপাদান দিয়ে তৈরি”। যথাঃ আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মাটি। তাই মৃত্যুর পর এই দেহ আগুনে দাহ করা হয় অথবা মাটি দেওয়া হয়। যে উপাদান দিয়ে এই দেহ তৈরি, মৃত্যুর পর আবার সেই একই উপাদানে মিশে যায়। প্রতিমা পঞ্চ মহতত্বে তৈরি(তার মধ্যে মাটি একটি)। প্রতিমা মন্ত্রে বিসর্জন(পুজায়) দেওয়ার পর তাতে আর প্রাণ থাকে না। তখন সেটি একটি তৈরি মূর্তি হয়ে যায়। 


ঈশ্বর যেহেতু নিরাকার। অনন্ত তার শক্তি, তাকে আমরা তার সৃষ্টির মধ্যমেই উপলব্দি করতে পারি, তাই তিনি সর্বত্র বিরাজিত। প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি প্রাণীর মধ্যই তিনি আছেন। তবে, পঞ্চ উপাদানে গড়া এই মানব দেহের প্রতীকী হিসেবেই আমরা পূজার সময় প্রতিমা তৈরি করি মাটি দিয়ে। পরবর্তীতে সেই মাটির প্রতিমায় মন্ত্রের মাধ্যমে ঈশ্বরের শক্তিকে আহ্বান করে (প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে) তাকে ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা করি। এই প্রতিমা পূজার সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে বিসর্জন। জলের মাধ্যমেই যেন মাটির প্রতিমা পুনরায় প্রকৃতিতে মিশে যায়, সেই জন্যই আমরা গঙ্গার জলে প্রতিমা বিসর্জন দেই।


আরো জানুন : সনাতনী বা হিন্দুরা মূর্তিপূজা কেন করে?


আমাদের হৃদয়ে যে নিরাকার ঈশ্বর রয়েছে, উপসনার নিমিত্তে মাটির প্রতিমা তৈরি করে তাকে “সাকার রূপ” দেওয়া হয়। পূজা শেষে পুনরায় সেই “সাকার রূপ”কে বিসর্জন দিয়ে নিরাকার ঈশ্বরকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া হয়। সেই কারণেই দুর্গা পূজার সময় যখন প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় তখন মায়ের প্রতি আমাদের প্রার্থনা থাকে, “মা, তুমি আবার এসো আমাদের মাঝে। এই একটি বছর তুমি থাকবে আমাদের হৃদয়ে । আবার, বছর পরে তোমার প্রতিমা গড়ে আমরা সাড়ম্বরে তোমার পূজা করবো।”


 যে জন্ম নিয়েছে, তার মৃত্যু অনিবার্য। এটাই প্রকৃতির শাশ্বত নিয়ম। ঠিক তেমনি যাকে আবাহন করা হয়, তার বিসর্জনও অনিবার্য। বিসর্জনের মাধ্যমেই “পুনরায় আগমনের” আশা সঞ্চারিত হয়। এই সকল কারনেই আমরা প্রতি বছর হৃদয়স্থ ঈশ্বরের মাটির প্রতিমা গড়ে তাকে বাহ্যিক ভাবে পূজা করি এবং পূজা শেষে বিসর্জনের মাধ্যমে তাকে আবার হৃদয়ে স্থানাতরিত করি। এটিই প্রতিমা পূজা ও প্রতিমা বিসর্জনের মূল তাৎপর্য।


সংক্ষেপে : ঈশ্বর নিরাকার। তার কোন আকার নাই। তাকে তার সৃষ্টির  মাধ্যমে উপলব্দি করা যায়। তিনি বা তার শক্তি সর্বত্র বিরাজমান। তাই প্রকৃতিরুপে সনাতনীরা সাকার উপসনার জন্য একটি রুপ প্রদান করে ( সেই অনন্ত শক্তির অংশ যেরুপে যুগে যুগে আবিভূত হয়েছেন )।  তারপর মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে সেই পরম শক্তিকে প্রতিমার মধ্যে (অনুরোধ) আহব্বান করা হয়, তাকে বলে প্রাণপ্রতিষ্ঠা,  আর বিসজ্জনের মন্ত্রের মাধ্যমে সেই শক্তিকে প্রতিমা থেকে মুক্ত হওয়ার আহব্বান করা হয়। কারণ তিনি এই সমস্ত বিশ্ব চরাচরকে ধারণ করে আছে, তাকে প্রতিমার মধ্যে আবদ্ধ করে ক্ষুদ্রভাবে কল্পনা করা উচিত নয়। এই বিষয়টি জাগ্রত দেবতা বা জাগ্রত মন্দিরের বিষয়টির সাথে সম্পর্কযুক্ত।। 


সংগৃহিত ও পরিমার্জিত

Post a Comment

উপরের তথ্যটি সম্পর্কিত আপনার কোন জিজ্ঞাসা আছে? বা এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে এমন কোন বিষয় জানার আছে? থাকলে অবশ্যই সুরুচিপূর্ণ কমেন্ট করে জানান, আমরা নিশ্চয়ই আপনাকে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করব এবং এতে উভয়ের জ্ঞানের প্রসার ঘটবে।

Previous Post Next Post