যেকোন ধরণের ধর্মীয় প্রশ্নের উত্তর জানতে বামে মেজেজ্ঞার আইকনে ক্লিক করে আমাদের প্রশ্নটি লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে জানান, SanatanLive.blogspot.com

আয়ুৰ্ব্বেদাচার্য্য মহর্ষি চরক ও চরক সংহিতা

মহর্ষি চরক প্রাচীন ভারতের একজন চিকিৎসক। চরক ছিলেন তৎকালীন ভারতবর্ষের কনিষ্ক রাজার চিকিৎসক। সেময়কালে তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতির সর্বপ্রথম সংকলনগ্রন্থ রচনা করেন, যা চরক সংহিতা নামে সমধিক পরিচিত।

জন্ম: (আনু. ১০০ খ্রিস্টপূর্ব -২০০ খ্রি.)


চরক - এক ঐতিহাসিক চরিত্র:


সংস্কৃত ভাষায় চরক মানে পরিভ্রমী ধার্মিক শিষ্য বা গোড়া ধার্মিক ব্যক্তি। আয়ুর্বেদ চিকিত্সার পিতৃস্বরূপ চরকের জন্ম সম্বন্ধে বহু ঐতিহাসিক কথন প্রচলিত। এর একটির মতে, একবার আয়ুর্বেদ-এর উপাসক সর্থেকেজ আকাশপথে পৃথিবী পরিভ্রমণ করার সময় দেখলেন যে, পৃথিবী রোগ-জরায় পরিপূর্ণ । তা দেখে তিনি ব্যথিত হন ও পৃথিবীতে থাকা রোগ সমূহ নিরাময়ের জন্য একজন মুনির সন্তান হিসাবে জন্ম গ্রহণ করতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যেহেতু তিনি এক “চর” হিসাবে পৃথিবী ভ্রমণ করেছিলেন, তাই তিনি চরক হিসাবে পরিচিত হন। তার পরে অগ্নিবেশ ইত্যাদি আত্রেয়র শিষ্যসমূহের লিখনের ওপর ভিত্তি করে চিকিত্সা সম্বন্ধে এক নতুন গ্রন্থ প্রণয়ন করা হয়। 


এই বইয়ের মূল ভাষা ছিল সংস্কৃত। পরবর্তীকালে তা আরবি, গ্রিক, ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক ইবনে সিনা আরবিতে অনূদিত চরক সংহিতা এবং তৎকালীন আরেকটি চিকিৎসা আকরগ্রন্থ সুশ্রুত সংহিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। আচার্য চরক তাঁকে অনেকে ঔষধ তত্ত্বের জনক বলেন। তাঁর নিয়ম, নিরীক্ষা, আবিস্কার হাজার বছর পরে আজও সত্য বলে টিকে আছে। যখন ইউরোপে শরীরবিদ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তত্ত্ব প্রচলিত ছিল, তখনই চরক তার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা দিয়ে শরীরবিদ্যা, ভ্রুণবিদ্যা, ঔষধ বিদ্যা, রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি, ডায়াবেটিক, যক্ষ্মা, হৃদরোগ সম্পর্কে নির্ভুল ব্যাখ্যা ও চিকিৎসা পদ্ধতির গোড়াপত্তন করেন। চরক সংহিতায় তিনি ১ লক্ষ ঔষধি গাছের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি মন ও দেহের ওপর খাদ্যের প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন।


চরক সংহিতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:


চরক সংহিতা ( সংস্কৃত:चरक संहिता) হ’ল ভারতীয় পরম্পরাগত ঔষধী ব্যবস্থা আয়ুর্বেদ-এর এক প্রাচীন গ্রন্থ। সুশ্রুত সংহিতার সাথে খ্রীষ্ট জন্মের কিছু শতক পরেই রচিত হওয়া এই গ্রন্থটি এই ব্যবস্থার প্রতিস্থাপক এতে বিভিন্ন রোগের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসাগুলো সংকলন করেন মহর্ষি চরক। বইটিতে ১২০টি অধ্যায় রয়েছে, যা আবার ৮ অংশে বিভক্ত।



চরক সংহিতা সূচী:



বর্তমান চরক সংহিতায় আটটা স্থান ও সর্বমোট ১২০ টা অধ্যায় আছে। সেই আটটা স্থান হ’ল-


১. সূত্র স্থান (৩০টা অধ্যায়), (এতে রোগ নিরাময়ের উপায়,সম্বলিত পান-ভোজন ও চিকিত্সকের দায়িত্ব সমূহর বিষয় আছে।)


২. নিদান স্থান (৮ টা অধ্যায়), (এতে আটটা প্রধান রোগের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)


৩. বিমান স্থান (৮ টা অধ্যায়), (এতে চিকিত্সা-জ্ঞান ও রোগের কারকের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)


৪. শরীর স্থান (৮টা অধ্যায়), (এতে গর্ভাধান ও মানুষের শরীর-রচনার কথা আলোচনা করা হয়েছে।)


৫. ইন্দ্রিয় স্থান (১২ টা অধ্যায়),(এতে রোগ নির্ণয় ও রোগের পূর্বাভাসের বিষয়ে বিশদ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।)


৬. চিকিত্সা স্থান (৩০টা অধ্যায়), (এতে বিশেষ চিকিত্সা সমূহর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)


৭. কল্প স্থান (১২টা অধ্যায়), (এতে সাধারণ চিকিত্সার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)


৮. সিদ্ধি স্থান (১২টা অধ্যায়), (এতে সাধারণ চিকিত্সার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)


এতে চিকিত্সা স্থানর ১৭টা অধ্যায় ও কল্প স্থান তথা সিদ্ধি স্থান সম্পূর্ণ ভাবে দৃধবলের(পঞ্চম শতাব্দী) দ্বারা পরে যোগ করা হয়েছিল। আয়ুর্বেদিক প্রয়োগের সাধারণ ও মৌলিক সিদ্ধান্ত সমূহ সম্বলিত ‘‘সূত্র স্থান’’-এর আরম্ভ হওয়া চরক সংহিতার অনন্য বৈশিষ্ট্য সমূহ হ’ল:


* রোগের কারণ ও নিরাময় আবিষ্কারের এক যুক্তিসংগত আলোচনা।


* পরীক্ষার বস্তুবাচক কৌশল:


“প্রত্যক্ষ প্রমাণ আয়ুর্বেদ-এর এক উল্লেখযোগ্য দিক। সংহিতায় বলা হয়েছে যে সকল প্রমাণের ভিতর প্রত্যক্ষ প্রমাণই সর্বাপেক্ষা বিশ্বাসযোগ্য। এই ব্যবস্থাতে কোনো রোগের এক সফল চিকিত্সা চারটি কারকের ওপরে নির্ভরশীল: চিকিত্সক,ঔষধ,শুশ্রুষাকার ও রোগী। একজন চিকিত্সকের গুণ সমূহ হ’ল: প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, এক বৃহৎ পরিসরের অভিজ্ঞতা, ব্যবহারিক দক্ষতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা; একটি ঔষধের গুণ সমূহ হ’ল: সহজলভ্যতা, ব্যবহারোপোযোগীতা,ব্যবহারবহুলতা ও উত্কৃষ্ট দক্ষতা; শুশ্রুষাকারের গুণ সমূহ হ’ল: শুশ্রুষা কৌশল সম্বন্ধে যথাযথ জ্ঞান, ব্যবহারিক দক্ষতা, রোগীর প্রতি দায়বদ্ধতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ;এবং রোগীর গুনাগুণ সমূহ হ’ল: ভাল স্মৃতিশক্তি, চিকিত্সকের নীতি-নির্দেশনার প্রতি সম্মান,সাহস ও লক্ষণসমূহ যথাযথভাবে বর্ণনা করার দক্ষতা।


টীকাসমূহ:


চরক সংহিতার ওপরে রচিত সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পাদটীকাটি হ’ল চক্রপানি দত্ত(১০৬৬) রচিত ‘‘চরকতাত্পর্যটীকা’’ বা ‘‘আয়ুর্বেদ দীপিকা’’। অন্যান্য টীকাসমূহের ভিতর ভট্টরক হরিশ্চন্দ্রর ‘‘চরকন্যাস’’(৬শতক),‘‘নিরন্তরপাদব্যাখ্যা’’ (৮৭৫), শিবদাস সেনের ‘‘চরকতত্ত্বপ্রদীপিকা’' (১৪৬০) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই সংহিতার ওপর রচিত উৎকৃষ্ট টীকাসমূহ হল নরসিংহ কবিরাজের ‘‘চরকতত্ত্বপ্রকাশ ও গংগাধর কবিরত্নর জল্পকল্পতরু (১৮৭৯)।


চরক সংহিতার মতে শুশ্রুষাকারের গুণ:


"চরকের মতে শুশ্রুষাকার সকল ভাল ব্যবহার তথা বিশুদ্ধ চরিত্রের,বুদ্ধিমান ও দক্ষ,দয়ালু,রোগীকে নিরীক্ষা করে সকল সুবিধা দেয়ার সমকক্ষ,খাদ্য তৈরী করতে পারঙ্গম,রোগীর গা ও হাত-মুখ ধুইয়ে দিতে সক্ষম,হাত-পা মালিশে সিদ্ধহস্ত,বিছানা ও কাপড়চোপড় পরিস্কার করতে উপযুক্ত জ্ঞান থাকা ও রোগীর আরোগ্য লাভ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে ইচ্ছুক তথা আদেশ লাভ করা কোনো কার্য উপেক্ষা করতে অনিচ্ছুক হতে হয়।" 


আধ্যাত্মিকতা ও শারীরিকতার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্দেশ করে সুস্থতার পথ নির্দেশ করেছেন। তিনি চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ নীতি-নৈতিকতার কথাও বলেন। তিনি বলেন- “চিকিৎসককে শুধু বিদ্যান এবং জ্ঞানী হলেই চলবে না রোগীর বাড়িতে গিয়ে আপনজনের মতো আচরণ করতে হবে।” “যে চিকিৎসক লোভের বসে চিকিৎসাকে পণ্য হিসেবে বিক্রি করেন, তিনি স্বর্ণের বদলে ছাইভস্ম পাওয়ার প্রত্যাশা করেন।”


তথ্যসূত্র :


1. উইকিপিডিয়া & উইকিপিডিয়া


2. রেফা:০২সুশ্রুত সংহিতার

Post a Comment

উপরের তথ্যটি সম্পর্কিত আপনার কোন জিজ্ঞাসা আছে? বা এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে এমন কোন বিষয় জানার আছে? থাকলে অবশ্যই সুরুচিপূর্ণ কমেন্ট করে জানান, আমরা নিশ্চয়ই আপনাকে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করব এবং এতে উভয়ের জ্ঞানের প্রসার ঘটবে।

Previous Post Next Post