যেকোন ধরণের ধর্মীয় প্রশ্নের উত্তর জানতে বামে মেজেজ্ঞার আইকনে ক্লিক করে আমাদের প্রশ্নটি লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে জানান, SanatanLive.blogspot.com

ঈশ্বর ভগবান দেবতার পার্থক্য

ঈশ্বর কে? ভগবান কে? ভগবান' শব্দের অর্থ কি? দেবতা কি? অবতার কি?


এই জিজ্ঞাসার উত্তর দেওয়ার পূর্বে আসুন সংক্ষেপে জানি. 


উত্তর-ঈশ্বর,ভগবান ও দেবতা–এতিনটি শব্দ এক নয়, সম্পূর্ণ আলাদা।এবিষয়ে সংগৃহিত তথ্যালোকের নিচের সংকলনটি বন্ধুদের জন্য দিচ্ছি।

ঈশ্বর ( ব্রহ্ম ) :


ঈশ্বর শব্দের মূল "ঈশ্" এর অর্থ হল,দক্ষ, মালিক,শাসক। দ্বিতীয় অংশ 'বর' যার আভিধানিক অর্থ হল "সেরা, চমৎকার, সুন্দর, শাসক"। অতএব, যুগপৎভাবে ঈশ্বর শব্দের অর্থ হল; সেরা বা সুন্দরের স্রষ্টা।


সনাতন দর্শন বলে, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ ঈশ্বর নিজে থেকে উৎপন্ন, তার কোন স্রষ্টা নাই, তিনি নিজেই নিজের স্রষ্টা। 


ঈশ্বর এক, অব্যয় ও অদ্বিতীয়। তিনি অনাদির আদি। তিনি নিরাকার পরমব্রহ্ম। এক হয়েও তিনি বহুদা বিভুতিতে প্রকাশ। যেমন তিনি একদিকে সৃষ্টি কর্তা ও স্হিতি কর্তা, অন্যদিকে দিকে তিনি প্রলয়েরও কর্তা। ঈশ্বর হল জাগতিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থানকারী কোন অস্তিত্ব.


ঋকবেদে বলা আছে ঈশ্বর “একমেবাদ্বিতীয়ম” – ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।ঈশ্বর বা ব্রহ্ম(নিরাকার ব্রহ্ম)।ঈশ্বর সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে তিনি “অবাংমনসগোচর” অর্থাৎ ঈশ্বরকে কথা(বাক), মন বা চোখ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, তিনি বাহ্য জগতের অতীত। 


ঈশ্বরের কোন বিশেষ গুণ বা শক্তির অংশ সাকার রুপে প্রকাশিত হয় তখন তাদের ভগবান ও দেবতা বলা হয়।



ভগবান কে ?


ভগবানের একটি সরল সংজ্ঞা হচ্ছেঃ


 'জন্মদাস্য যতঃ' - "যাঁর থেকে সমস্ত প্রকাশিত হয়"(ভাঃ ১/১/


#ভগবান!


“ভগ” ও “বান” – এদুটি শব্দের সন্ধির ফলে মূলতঃ ভগবান শব্দের উদ্ভব হয়েছে। “ভগ” শব্দটি গুনবাচক উপসর্গ এবং “বান” শব্দের অর্থ হলো অধিকারী কিংবা যার আছে অর্থে বুঝায়। “বান” শব্দের পূর্বে গুনবাচক উপসর্গ “ভগ” শব্দটি বসানোর পর একত্রে “ভগবান” শব্দটি এসেছে। বান শব্দের আগে ভগ শব্দ বসানো হয়েছে যেমনটা রূপবান, যার ধনবান শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে ঠিক একভাবে। ‘ভগ’ অর্থ ঐশ্বর্য্য এবং ‘বান’ অর্থ অধিকারী, যার আছে। ঠিক যেভাবে যার সুন্দর রূপ আছে – আমরা তাকে বলি রূপবান, যার ধন আছে ধনবান, ঠিক তদ্রুপ যিনি ভগ অর্থাত্‍ ঐশ্বর্যের অধিকারী তাকে বলে ভগবান । পরাশর মুনি ভগবান শব্দের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন


ঐশ্বর্য্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ ।

জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষন্নত্‍ ভগ ইতিঙ্গনা ॥


যার মধ্যে সমস্ত ঐশ্বর্য্য, সমস্ত বীর্য্য, সমস্ত যশ, সমস্ত শ্রী, সমস্ত জ্ঞান এবং সমস্ত বৈরাগ্য এই ছয়টি গুন পূর্ণমাত্রায় বর্তমান, তিনি হচ্ছেন ভগবান। এই জগতে কেউ বড় ধনী হতে পারে, কিন্তু কেউ দাবী করতে পারেনা আমি সমস্ত ধনের মালিক। এই জগতে কেউ জ্ঞানী হতে পারে ,কিন্তু তিনি দাবী করতে পারে না সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী। কিন্তু ভগবান সমস্ত ধন ,সমস্ত জ্ঞান ,সমস্ত সৌন্দর্য্য, সমস্ত যশ ,সমস্ত শক্তির অধিকারী, তাই তাকে বলা হয় ভগবান । সুতরাং কোন ব্যক্তির মধ্যে এছ’টি গুনের পূর্ণ বিকাশ (আংশিক নয়) দেখা গেলে তাকে ভগবান সম্মোধন করতে বাঁধা নেই। মূলতঃ একারনে সনাতন ধর্মে বহু মুনি, মহামুনি, ঋষি, মহাঋষিদের নামের আগে ভগবান শব্দটির ব্যবহার হতে দেখা যায়।


সনাতন ধর্মের প্রধান তিনজন দেবতা বা ভগবান হল:


ব্রহ্মা : সূষ্টিকর্তা, ঈশ্বরের যে সাকার রুপ বা শক্তি সৃষ্টি করেন।


বিষ্ণু : পালনকর্তা,ঈশ্বরের যে সাকার রুপ বা শক্তি পালন করেন।


শিব : প্রলয়কর্তা, ঈশ্বরের যে সাকার রুপ বা শক্তি ধ্বংস করেন।


#দেবতা!


দেবতা শব্দের অর্থ হলো যাদের মানে ও দানে আমরা পুষ্ট। প্রকৃতির যে সকল উপাদান বা পরমেশ্বর সৃষ্ট বিভুতি জীবের জীবনধারাকে সর্বদা মসৃন করে রাখে এবং তাদের দান। যেমন : ঈশ্বরের গুণ বা শক্তি বায়ুর দেবতা বরুনদেব, আগুনের দেবতা অগ্নিদেব ইত্যাদি।


দেবতাদের মধ্যেও বৈদিক দেবতা, পৌরাণিক দেবতা ইত্যাদি প্রকারভেদ আছে।


#অবতার!


ঈশ্বর বা ভগবান বা দেবতার কোন বিশেষ গুণ যখন প্রকৃতির প্রয়োজনে সাকার রুপে পৃথিবীতে আবির্ভাব বা আবির্ভূত হয়ে জীবদেহ ধারণ করেন, তখন তাকে অবতার বলে।


তথ্যসূত্র:

হিন্দু দেবদেবী

অবতার

Post a Comment

উপরের তথ্যটি সম্পর্কিত আপনার কোন জিজ্ঞাসা আছে? বা এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে এমন কোন বিষয় জানার আছে? থাকলে অবশ্যই সুরুচিপূর্ণ কমেন্ট করে জানান, আমরা নিশ্চয়ই আপনাকে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করব এবং এতে উভয়ের জ্ঞানের প্রসার ঘটবে।

Previous Post Next Post