যেকোন ধরণের ধর্মীয় প্রশ্নের উত্তর জানতে বামে মেজেজ্ঞার আইকনে ক্লিক করে আমাদের প্রশ্নটি লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে জানান, SanatanLive.blogspot.com

দেবীগঞ্জের দর্শনীয় প্রাচীন মন্দিরের একটি শ্রীশ্রী জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ী

বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় জেলাধীন দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরে অবস্থিত একটি প্রাচীণ ঐতিহ্যবাহী মন্দির শ্রীশ্রী জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ী ৷ মন্দিরটি দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ হতে প্রায় ৫০০মিটার উত্তর-পশ্চিমে ট্রাফিক মোড় পার হয়ে করতোয়া সেতু রোডের উত্তরে  অবস্থিত ৷ উনিশ শতকের প্রথম দিকে নির্মিত এই মন্দিরটি প্রাচীন কোম্পানী আমলের রাজকীয় অট্টালিকা কাঠামোতে ইট, পাথর আর চুন দিয়ে তৈরি ৷ তৎকালীন কোচবিহার রাজ্যের ভূপ বাহাদুর মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন ৷ মন্দির নিয়ে কথিত ইতিহাস, একবার মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ এর ম্যানেজার ভজনপুর তহশিলে যাওয়ার যাওয়ার সময় যখন ‘শালডাঙ্গার’ জঙ্গলে পৌছান, তখন হঠাৎ করে ম্যানেজারের বাহক হাতি খুব চঞ্চল হয়ে ওঠে এবং আর সামনের দিকে এগোতে চায় না ৷ তখন তাকে ছেড়ে দেওয়া হলে অনেক পোড়া ভস্ম পড়ে থাকা স্থানে পৌছায় ৷ হাতি শূঁড় দিয়ে ভস্ম গুলি সড়াতে থাকলে তা থেকে একটি পিতলে মূর্তি পাওয়া যায় ৷ এই মূর্তিটি ছিল আংশিক ভাঙ্গা দশভূজা দেবী দূর্গার ৷ মূর্তিটি উদ্ধারের পর হাতি ভজনপুরের দিকে যেতে না চাইলে ম্যানেজার পুনরায় দেবীগঞ্জে ফিরে আসেন এবং মূর্তি লাভের খবর রাজার নিকট পাঠানো হয় ৷ রাজা হুকুম দেন, মূর্তিটি যেহেতু আংশিক ভাঙ্গা, সেহেতু সেটি কাশীতে পাটিয়ে ভালভাবে নির্মাণ করা হোক এবং তারপর দেবীগঞ্জেই একটি মন্দির নির্মাণ করে উক্ত মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করা হোক ৷ 

রাজার ইচ্ছানুযায়ী সেই মূর্তিটিকে কাশীতে পাঠিয়ে অষ্টধাতু দিয়ে তৈরি করে আনা হয় এবং ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে দেবীগঞ্জ জগবন্ধু ঠাকুরবাড়ী নির্মাণ করে মূর্তিটি তাতে প্রতিষ্টা করা হয় ৷ অসাবধানতার কারণে ১৯৬৯ সালে মূর্তিটি চুরি হয়ে যায় ৷ কিন্তু কালের সাক্ষী হয়ে যুগ-যুগান্তর পেরিয়ে আজও দেবীগঞ্জের ইতিহাস হয়ে দাড়িয়ে আছে রাজা কর্তৃক নির্মিত এই প্রাচীন মন্দিরটি ৷ মন্দিরটি দেবীগঞ্জ উপজেলার কেন্দ্রীয় মন্দির হিসেবে পরিচিত ৷ এখনো মন্দিরটিতে মহা সমারোহে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয় ৷ শুধুমাত্র দূর্গা পূজাই নয়, মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে জন্মষ্টমী, দীপাবলি উৎসব, কালী পূজা সহ সনাতন ধর্মীয় সকল উৎসব ও ধর্মানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ৷ দূর-দূরান্তের পর্যটক ও ভক্তের আগমনে মন্দির প্রাঙ্গণ অধিকাংশ সময় আনন্দমুখর থাকে ৷
রাজা কর্তৃক মন্দির প্রতিষ্ঠার পর এবার ২০২২ ইং সাল ৯ম তম যুগে ১০৯তম দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে ৷ মন্দিরটি পরিচালনায় সুযোগ্য কমিটির সুদক্ষতায় সনাতনী কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক প্রতীক হয়ে আছে ৷ ইতোমধ্যে সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ দেবীগঞ্জ উপজেলা শাখা এর তরুণ উদীয়মান সদস্যরা মন্দিরকেন্দ্রিক ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ও সংস্কৃতিচর্চা মূলক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে ৷ বর্তমানে মন্দিরটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী স্বদেশ চন্দ্র বর্মন এবং সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজ সেবক  বাবু শ্রী নন্দন কুমার সাহা ৷


পবিত্র রায়
সাধারন সম্পাদক
সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ
দেবীগঞ্জ উপজেলা শাখা,
দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড় ৷

Post a Comment

উপরের তথ্যটি সম্পর্কিত আপনার কোন জিজ্ঞাসা আছে? বা এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে এমন কোন বিষয় জানার আছে? থাকলে অবশ্যই সুরুচিপূর্ণ কমেন্ট করে জানান, আমরা নিশ্চয়ই আপনাকে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করব এবং এতে উভয়ের জ্ঞানের প্রসার ঘটবে।

Previous Post Next Post