ইষ্ট দেবতা মানে কি?
যে দেবতার পূজো কোনও কূলে পরম্পরা অনুযায়ি হয় তাকে ইষ্ট দেবতা বলা হয়। যদি ইষ্ট দেবতা কে তা ভুলে যায়, তাহলে ইষ্ট দেবতা চয়েজ ফলের আখাঙ্কা অনুযায়ী নিজের ইচ্ছায় করা যায়। অর্থাৎ নিজের মূল আরাধ্য / উপাস্য দেবতায় ইষ্ট দেবতা। ইষ্ট দেবতা ২ ভাবে হয়ে থাকে : বংশ পরম্পরায় উপাস্য ও নিজের উপাস্য।
ভগবান শিব কি শুধু শৈব ধর্মাবলম্বীর!
শৈবধর্মে ভগবান শিবকে, বৈষ্ণবধর্মে ভগবান বিষ্ণুকে, শাক্ত ধর্মে দেবী পর ব্রহ্মকে, একমাত্র সর্বোচ্চ ঈশ্বর বলে মনে করা হয়। শৈব ধর্মের অনুগামীরা ভগবান শিব কেই স্রষ্টা, পালনকর্তা, ধ্বংসকর্তা, সকল বস্তুর প্রকাশ ও ব্রহ্মস্বরূপ হিসেবে পুজার্চ্চনা করেন। এই ধর্মের অনুগামীদের "শৈব" নামে অভিহিত করা হয়। শাক্তধর্মমতে, প্রধান দেবী হলেন পর ব্রহ্ম । বৈষ্ণবধর্ম মতে, বিষ্ণু বা তার অবতারগণ (মুখ্যত রাম ও কৃষ্ণ) আদি তথা সর্বোচ্চ ঈশ্বর রূপে পূজিত হন। এখানে লক্ষ্য করলে বুঝবেন পরম ব্রহ্মকে কে কোন যোগের অনুশীলনের মাধ্যমে উপলব্দি করতেছে, তার প্রভাব তার উপসনার ধরণ ও জীবন চর্চায় পড়ছে। অনেকটা সাকার আর নিরাকার উপসনার মতো, যেটা ইচ্ছা করতে পারেন। ঠিক তেমনি আপনি যে ভগবানকে শ্রেষ্ট মনে করেন, তার উপসনা করতে পারবেন। কারণ ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ত্রিদেবের মধ্যে ভেদাভেদ নেই। যেকোন দেবতাকে সেরা মনে করে, তার পুজা করা ও যোগের মাধ্যমে সিদ্ধিলাভ করা যায়। আর তার আরাধ্য অনুযায়ী সে শৈব, বৈষ্ণব, শাক্ত এর অনুসারি হয়ে থাকে।
যতমত, ততপথ, বহুজন বহুমত, সকল মতের একই পথ - এটাই সনাতন।
সম্পদায়, বর্ণ এগুলা জন্মনুযায়ী হয় না। মোক্ষলাভ না হওয়া পর্যন্ত, এই জন্মে যোগ অনুশীলনে কেউ ব্যর্থ হলে সে পরজন্মে এমন গৃহে /পরিবেশে জন্ম নেয় সে আগের জন্মে যে জায়গায় শেষ করেছিল, সেই স্তর হতে যোগ অনুশীলন শুরু করতে পারে। কিন্তু বর্তমান জন্মে ঐ অবস্থান থেকে উদ্ধ গতি হবে নাকি মোক্ষ লাভের পথে অধ গতি হবে তা তার বর্তমান জন্মের কর্ম ফলে নির্ভর করে। তাই জন্মনুযায়ী সম্পদায় বা বর্ণ হয়না। এই নিয়ে গীতায় ২ টা শ্লোক পাবেন: ১ টা হল: “চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ।.... (শ্রীমদ্ভগবত গীতার অধ্যায়- ৪, শ্লোক- ১৩) অর্থাৎ কর্মগুণ অনুসারে মানুষদের চারটি শ্রেণীতে / বর্ণ ভাগ করা হয়েছে। বর্ণ জন্মগুণ অনুসারে নয়। রত্নাকর দস্যু বাল্মিকী মুনি হতে পারে, রাবন যেমন কর্মের জন্য রাক্ষস উপাধি পায়। ঠিক তেমনি আপনি যেই হোন না কেন, প্রয়োজনীয় গুণাবলী অর্জন করলে মানুষ দেবতাও হতে পারে। উদা : সিদ্ধ যোগি/পুরুষ গণ। কাজেই যে কেউ শৈব,শাক্ত,বৈষ্ণব, বর্ণ : ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র কি হবে তা কর্মে ও গুনের উপর নির্ভর করে, আর কার কি গুণ থাকে ও তার কর্ম কিরকম! তা গীতায় ভগবান উল্লেখ করেছেন। যে কেউ প্রয়োজনীয় গুণাবলি অর্জন করলে তার উপাধি বা পদবীর অধিকারি হতে পারে। আর আপনি যদি শিবকে শ্রেষ্ট মনে করে তার উপসনা করেন, তার সাথে সম্পর্কিত যোগের অনুশীলন করেন, তাহলেই আপনি শৈব পন্থার অনুসারি।